




ক’রোনা সং’ক্রমণ ছিনিয়ে নিয়েছে দৈনন্দিন রোজগারের পথ। সংসার চালানোই যেন দায় হয়ে পড়েছে। উপায় না দেখে টোটো নিয়ে রাস্তায় নামতে হলো এক মহিলাকে। ঘরের কাজ তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে, সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হয় রোজগারের আশায়, যাতে ন্যূনতম অর্থেও সংসারটা কোন রকমে চলে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থ সঞ্চয় তো দূরের কথা, দুবেলা দুমুঠো খেতে পেলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।





পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামের ঘটনা। ওই গ্রামের এক বাসিন্দা অরুণ কুমার বর্মন পরিবার নিয়ে অসহায়তার মধ্যে দিন যাপন করছেন। পরিবার খুব বড় নয়, স্ত্রী, তিন মেয়ে, এবং শাশুড়ি মা রয়েছেন পরিবারে। লকডাউন এ ভ্যান টেনের দিনযাপন করতেন অরুণ। যা ইনকাম হতো তাতে কোনরকমে সংসার চলে যেত। তাতেই এবার বাধ সেধেছে করোনা পরিস্থিতি।





গ্রামে রয়েছে মাত্র এক কুঠুরি ঘর। তাতেই ৬ জন মিলে কোনরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে থাকেন। ঘরে অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অভাব না মিটলেও কোন রকমে দিন চলে যেত। তার বড় মেয়ে পড়ে একাদশ শ্রেণীতে, বাকি দুই মেয়ে নবম এবং ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। সংসার চালাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় অন্যদিকে আবার রয়েছে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ। সংসারে অভাব থাকলে অশান্তি তো অনিবার্য। দিনরাত স্বামী-স্ত্রীতে ঝামেলা হতো। সংসারের অভাব নিবারণ করতে অরুণের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ গ্রহণ করেন। তাতেও বাধা হয়ে দাঁড়ালো এই লকডাউন পরিস্থিতি।





গত তিন মাসযাবত লকডাউন চলার পর আনলক পরিস্থিতি চালু করা হয়। এতে সংক্রমিত সংখ্যা বেড়েছে বই কমেনি। কনটেইনমেন্ট জন গু’লিতে আ’ক্রান্তের সংখ্যা এতই বেড়ে চলেছে যে একে আটকানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সুস্থতার সংখ্যা মৃ’ত্যুর হারের চেয়ে বেশি হলেও, প্রতিদিন মৃ’ত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দিনমজুর হিসেবে সংসার চালানো অরুণ বর্মন কাজ হারিয়ে বর্তমানে বাড়িতেই বসে আছে। একদিকে সংসার অন্যদিকে মেয়েদের পড়াশোনা, কিভাবে চলবে এসব। রোজগার না থাকলে কিছুই সম্ভব না। তাই স্ত্রীলোক হয়েও টোটো নিয়ে বেরোলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তমলুক মেচেদা ময়না সহ একাধিক অঞ্চলে নিয়ে যাত্রী বহন করেন তিনি। তিনি মনে করেন, মেয়েরা যদি দেশ চালাতে পারে তাহলে তিনি কেন পারবেন না সামান্য টোটো চালাতে।তিনি বলেন,”তবে কোনোদিনই ভাবিনি যে আমাকে টোটো চালাতে হবে। কষ্ট হলেও ব্যাংকের ঋণ শোধ করে সংসার চালিয়ে অনেকটাই খুশিতে আছি।”




