চিনতে পারছেন এনাকে?এনার জীবন সংগ্রামের কথা জানলে চোখে জল এসে যাবে !

বুড়িমার আতস বাজি খুব বিখ্রযাত আসুন আমরা জেনে নিই, ধার করা দশটা একশো টাকার নোট। তাই দিয়ে নানা রকম বাজি কিনে দোকান সাজিয়ে বসলেন। জমল বিক্রিবাটা। তিন দিনের মাথায় পুলিশ এসে হাজির। বাজি বিক্রির লাইসেন্স আছে? বাজি বিক্রি করতে লাইসেন্স লাগে, জানা ছিল না। বললেন, “এ বারের মতো ছেড়ে দিন।” কাজ হল না। বাজি বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ, গুঁড়িয়ে দিল দোকান। জেদ চেপে গেল। বাজির ব্যবসাই করবেন তিনি। করলেনও। ধীরে ধীরে বাংলার বাজি ব্যবসায় এক নম্বর জায়গাটি পাকা করে ফেললেন অন্নপূর্ণা দেবী। সবার ‘বুড়িমা’।

১৯৪৮। দেশভাগ, দাঙ্গায় বিধ্বস্ত পূর্ব পাকিস্তান। ডাক্তার রোগ ধরতে পারেনি, বাঁচানো যায়নি স্বামীকে। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্নপূর্ণা পাড়ি দিলেন গঙ্গারামপুর। ঠাঁই হল ক্যাম্পে। গঙ্গারামপুর বাজারে এক জনের কাছ থেকে শিখে নিলেন বিড়ি বাঁধা। ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ি বাঁধতে লাগলেন। একটু একটু করে, সব হল। বাড়ি, ছেলের পড়াশোনা, মেয়ের বিয়ে— বরানগরে। বেলুড়ে ন’শো টাকায় একটা দোকান কিনলেন। গঙ্গারামপুরের পাট চুকল।

ছেলেকে দোকানে বসিয়ে চষে ফেলেন উত্তরপাড়া, সালকিয়া, বড়বাজার। কী ব্যবসা করবেন? কিসে লাভ? সরস্বতীপুজোর আগে পিলখানার যোগেন্দ্র পালের কারখানা থেকে ঠেলাভর্তি করে প্রতিমা নিয়ে এলেন। বেলুড়ে কোথাও ঠাকুর তৈরি হত না, ছুটতে হত দূরে। হাতের কাছে প্রতিমা পেয়ে সবাই হামলে পড়ল। দোলের আগে রঙের পসরা নিয়ে বসলেন। সেটাও জমল।

এক দিন দোকানে এক ঝাঁক ছেলেমেয়ে হাজির। “বুড়িমা, লজেন্স দাও!” কী বলল ওরা? দোকানে রাখা আয়নাটা সামনে ধরলেন। চুলে পাক, শরীরে বয়সের ছাপ। আশ্চর্য, বুড়িমা নামটাও কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল। অন্নপূর্ণা দেবী হয়ে গেলেন ‘বুড়িমা’।

কালীপুজো। বুড়িমার ইচ্ছে দোকানে বাজি তুলবেন। হাতে পয়সা নেই। ধারের টাকায় বাজি কিনলেন, তার পরই সেই ঘটনা। দোকান ভাঙল পুলিশ। এর ক’দিন পরেই এক দুপুরে ছেলেকে চমকে দিলেন, “এই দেখ বাজি বিক্রির লাইসেন্স। আর বাজি তৈরির অনুমতিপত্রও!”

লাইসেন্স তো হল। কিন্তু কে শেখাবে বাজি বানানো? বাঁকড়ায় দেখা আকবর আলির সঙ্গে। হাতে ধরে শেখালেন— কাকে বলে সোরা, ব্যাটরা, গন্ধক কী রকম দেখতে। প্রথম মরশুমেই বাজিমাত। সব বিক্রি হয়ে গেল। আকবরের ফর্মুলাতেই তৈরি হল ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’।

বাজি-কারখানার জন্য তালবান্দা, ডানকুনি, শিবকালীতে জায়গা কিনলেন। ডানকুনিতে মাটি খুঁড়তে বেরল বিশাল শিবলিঙ্গ। চকলেট বোমের লোগো হল তা। কারখানার জন্য কিনলেও তালবান্দার জমি বিলিয়ে দিলেন গরিবদের। এক সময় যাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, তিনিই পঞ্চাশটি পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিলেন। বলতেন, “ব্যবসাটা তুচ্ছ! এসেছি মানুষকে ভালবাসতে।”

১৬/১ পিয়ারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বিরাট বাড়ির সর্বত্র বুড়িমা। তাঁর শেষ দিনটা আজও চোখে ভাসে নাতি সুমন দাসের। লোকে ভর্তি বাড়ি, থমথমে। এরই মধ্যে বাইরে কারা ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’ ফাটাচ্ছে। শোকের সময় চ্যাংড়ামো! উত্তর এল, ‘‘চ্যাংড়ামো নয়, জয়ধ্বনি। যে চকলেট বোম বানিয়ে গোটা বাজির বাজার জিতে নিয়েছেন, সেটা ফাটিয়েই বুড়িমাকে শ্রদ্ধা জানালাম!”

লেখক- অময় দেব রায়

Related Posts

নীল কমল কোম্পানি শুরু হয়েছিল বোতাম বানানো দিয়ে, আজ 123 কোটির টার্নওভার। ভারতের জনপ্রিয় চেয়ার কোম্পানির এত সাফল্যের আসল কাহিনী বেরিয়ে এলো ।

বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের ফার্নিচার মার্কেট লঞ্চ হয়েছে। এইসব ফার্নিচারের দাম যেমন বেশি হয় তেমনই এইসব ফার্নিচারের দেখাশোনাও বেশি করতে হয়। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন নীলকমল…

“পুষ্পা” ফিল্মের রক্ত চন্দন এর দাম জানেন কত? বিলুপ্ত এই চন্দন কীভাবে এল ফিল্মের সেটে? জানলে আপনিও চমকে যাবেন

সম্প্রতি রিলিজ হয়েছে আল্লু আর্জুনের ফিল্ম “পুষ্পা”। এই ফিল্ম রক্ত চন্দনের কাঠ নিয়ে তৈরি। আজ আমরা আপনাদের এই রক্ত চন্দনের কাঠ নিয়েই কথা বলব। রক্ত চন্দন অন্ধ্রপ্রদেশের…

নিজের ধর্ম বদলাবো না, অন্যের ধর্ম বদলাতে দেবো না! এই শর্তে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করলেন এই অবিনাশ! মেয়ে এলো ৮০০০ কিলো মিটার দুর থেকে

“প্রেম” শব্দটা ছোটো হলেও এর গভীরতা অনেক। প্রেমের সম্পর্ককে কোনোদিন ধর্ম, জাতি আটকাতে পারেনি। আপনারা অনেক সিনেমা দেখে থাকতে পারেন এই ধরনের। আজ আমরা বাস্তবের এক ঘটনা…

23 বছরের এই ভাই-বোনের জুটি 1 লাখ টাকা ইনভেস্ট করে যে অভিনব উপায়ে আজ 800 কোটি টাকার ব্যবসা দার করান, জানলে আপনিও অনুপ্রাণিত হবেন

একটি মেয়ে তার ভাইয়ের সাথে মিলে নিজেদের পরিবারকে সফলতার সেই শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন যা বড় বড় ব্যবসায়ীরাও পারেননি। 23 বছর বয়সে সাধারণত সকলে পড়াশোনা শেষ করে…

অমিতাভ বচ্চনের সাথে সম্পর্ক ভালো নয় তার ভাইয়ের, রোজ গারের দিক থেকেও তার ছোট ভাই অনেক এগিয়ে ! বিস্তারিত জানলে আপনিও অবাক হবেন

প্রয়াত কিংবদন্তি কবি হরিবংশ রাই বচ্চনকে কেনা চেনেন? ছোটবেলা থেকেই তাঁর কবিতা স্কুলে পড়ানো হয়। আজও মানুষ তার কবিতাকে শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে। কবি হরিবংশ রাই বচ্চন…

১৯০ কোটি টাকা লটারীতে জিতলেন এই মহিলা! কিন্তু তিনি না জেনে টিকিট সহ জামা ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে ফেলে, তারপর যা হলো

লটারি খেলাটিও একটি চমৎকার খেলা। ভাগ্য সহায় থাকলে যে কেউ মাটি থেকে আকাশে, আবার আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যেতে পারে। একজন মহিলার সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল, তবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *