




সমাজে নিজের যোগদান দেওয়ার কথা উঠলেই বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনো বাহানায় পিছু হাটতে চান। কিন্তু আজ আমরা আপনাদের যার কথা বলব তিনি প্রতিবন্ধী হয়েও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজের ভরপুর যোগদান দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটির নাম উপেন্দ্র যাদব। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী উপেন্দ্র একটি লাঠির সাহায্যে চলাফেরা করেন। মাত্র 18 বছর বয়সে প্রায় 60 জন বাচ্চাকে তিনি অবৈতনিক শিক্ষা প্রদান করছেন। ঝাড়খণ্ডের চতরা জেলার বাসিন্দা উপেন্দ্র একাদশ শ্রেণি পাশ করে ইন্টারমিডিয়েটের পড়াশোনা করছেন।





চার ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে বড় হওয়ায় তার ওপর পরিবারেরও দায়িত্ব আছে। এহেন উপেন্দ্র প্রতিদিন লাঠির সাহায্যে স্কুলে যান। বলে রাখি তার একটি হাত ও পা বিকলাঙ্গ। এই প্রতিবন্ধকতা তাকে ভেঙ্গে দিতে পারেনি বরং সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছেন উপেন্দ্র যাদব। ডান হাত কাজ না করার কারণে উপেন্দ্র বাঁ হাত দিয়ে লেখেন ও সব কাজ করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ার কারণে তিনি কোনো টিউশন ছাড়াই স্কুলের পরীক্ষায় বসেন এবং সফলতাও লাভ করেন।





পরিবারের দায়িত্ব ও পড়াশোনা সামলিয়েও উপেন্দ্র দূরের গ্রামে যান বাচ্চাদের পড়াতে। একটি ইন্টারভিউতে উপেন্দ্র জানান তাদের গ্রামে পড়াশোনার ব্যবস্থা খুবই সীমিত। যা লকডাউন এর কারণে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তাদের গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারের কাছেই স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ নেই। বর্তমান কো’রো’না পরিস্থিতিতে পড়াশোনা যেখানে পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে সেখানে তাদের গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনা পিছিয়ে পড়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে উপেন্দ্র নিজে বাচ্চাদের পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।





যদিও প্রথম প্রথম তার এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি দমে যাননি তার সিদ্ধান্তে তিনি অটল ছিলেন। প্রথম প্রথম অল্প বাচ্চা হওয়ায় উপেন্দ্র নিজের বাড়িতেই তাদের পড়াতেন কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উপেন্দ্র বাধ্য হয়ে একটি স্কুল বাড়িতে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। উপেন্দ্র জানান যেই স্কুল বাড়িতে তিনি পড়ান তার অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষার সময় সেখানে ছাদ থেকে জল পড়ে, মাঝে মাঝে অনেক রকমের পোকামাকড়ও ক্লাসে ঢুকে পড়ে।





উপেন্দ্র প্রতিবন্ধী হওয়ায় যেই ভাতা পান তার সাথে আরও 1 হাজার টাকা জুড়ে স্কুলে একটি বোর্ড লাগিয়েছেন। উপেন্দ্র জানান তার সীমিত অর্থে এর থেকে বেশি সুবিধা বাচ্চাদের দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। উপেন্দ্র বাচ্চাদের পড়ানোর পর নিজেও পড়েন। তিনি জানান বাচ্চাদের পড়তে দেখে পড়াশোনার প্রতি তার ইচ্ছে আরও বেড়ে গেছে। প্রথম প্রথম যারা তাকে নিয়ে মজা করতেন আজ তারাই তাকে সম্মানের চোখে দেখেন।





প্রাইমারি থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বাচ্চারা পড়তে আসে তার কাছে। 20 জন ছেলে ও 40 জন মেয়ে পড়ে। উপেন্দ্র আরো বলেন ইন্টারমিডিয়েট এর পড়া শেষ করে তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান। তিনি যদি আইএএস অফিসার হতে পারেন তাহলে সমাজের উন্নতি সাধনের সম্পূর্ণ চেষ্টা করবেন বলেও জানান। উপেন্দ্র বহু মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়েও আত্মনির্ভর হওয়া যায়, মানুষ যদি চায় তাহলে সকল পরিস্থিতিতে জয়লাভ করতে পারে।।




