পেশায় শ্রমিক হলেও লকডাউন এর পর থেকে পরিযায়ী শ্রমিক নামেই পরিচিত তারা। দুলেশ্বর টান্ডি বছর সাতাশের এক যুবক। সেও এমনই একজন পরিযায়ী শ্রমিক ছিল। তবে এখন তার পরিচিতি র্যাপার দুলে রকার হিসেবে। ক’রোনা সংক্র’মণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা আমরা সকলেই জানি।দুলেশ্বর টান্ডির র্যাপার হয়ে ওঠার পিছনে ঠিক সেইরকম ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে।
যেহেতু তিনি একজন পরিশ্রমী কোথায় খুব কাছ থেকে তাদের দুরবস্থা দেখে ছিলেন তিনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার পরিস্থিতি দেখেই তিনি আজ স্ট্রীট আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। রচনা করেছেন তাঁর নিজস্ব র্যাপ। দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়া, দিনের পর দিন অভুক্ত থাকা, কোন কোন জায়গায় বঞ্চনার শিকার হওয়া, দিনের পর দিন এই সবই সহ্য করতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। বাড়ি ফিরেও শান্তি ছিল না। দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজনের থেকে দূরে থেকেও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হয়েছে। অনেকে আবার সেটুকুও পাননি।
এইসব চরম দুর্দশার ছোট ছোট কাহিনী নিয়েই গান লিখলেন ওড়িশার যুবক দুলেশ্বর। তার দাম এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওডিশার কালাহান্দি জেলার বাসিন্দা দুলে রকার। সেখানকারই এক সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ে বিএসসি পাশ করেন তিনি। ভাগ্যের পরিহাসে চলে যেতে হয় রায়পুর। সেখানে একটি হোটেলে ওয়েটারের কাজ করতেন দুলে রকার।
দেশজুড়ে ক’রোনা পরিস্থিতি তে লক্ষাধিক পরিচয় শ্রমিকদের দিনের-পর-দিন চরম দুর্দশায় কাটানোর করুন কাহিনী সাধারণ মানুষের কানে পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যেই র্যাপ করছেন তিনি। এর আগেও তিনি বহুবার র্যাপ করেছেন। চন্ডিগড় সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে করেছেন এই যুবক। না কোন রেকর্ডিং রুম বা আধুনিক কোন বাদ্যযন্ত্র নেই তার র্যাপ এর ব্যাকগ্রাউন্ডে। তার গান তিনি রেকর্ড করে রাখেন সাধারণ মোবাইল রেকর্ডারে। নিজের গলার চাতুর্যে সবটা তিনি নিজেই করেন।
https://youtu.be/f3XpZG2q4_0
তিনি জানিয়েছেন,”খবরে দেখলাম করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে চীনে, আমেরিকায় ও ইওরোপের নানা দেশে। বুঝতে পারলাম, পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে। রাজ্য সরকার নানা জায়গায় লকডাউন জাকার পরেই ঠিক করি, বাড়ি ফিরে আসব।তখনই দেখতে পেলাম, মানুষ খালি পায়ে, কোলে বাচ্চা নিয়ে কেবলই বাড়ির দিকে হেঁটে চলেছে, তখনই আমার প্রথম গানটা আমি লিখি। নাম, ‘টেলিং দ্য ট্রুথ’।”
তার দ্বিতীয় গান,”শুন সরকার সৎ কথা” অর্থাৎ শোনো সরকার, সত্যি কথা শোনো। তার গান গাওয়ার ভঙ্গিমা দেখে মিউজিক রাষ্ট্রের তরফ থেকে গান গাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন দুলে রকার। বর্তমানে তিনি তার মায়ের সঙ্গে মাটির এক কুঁড়েঘরে থাকেন। যদিও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, তবুও দেখা যাক তার এই বিশেষ ট্যালেন্ট আগামী দিনে জনসমাজে যথাযথ পরিচিতি লাভ করতে পারে কিনা।