




হিন্দুদের জীবন-যাপনে শাস্ত্রের প্রভাব অনেকটাই। গৃহপ্রবেশ থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সবই হয় শাস্ত্র মত অনুযায়ী। প্রত্যেক মানুষেরই শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিত। আমাদের শাস্ত্রে আমনে সাথী রচনা উল্লেখ করা রয়েছে যা প্রত্যেকটি ব্যক্তির প্রতিদিন করা উচিত। শাস্ত্রে লেখা এই সাতটি কাজ যদি করা যায়, তাহলে একটি মানুষের জীবন সুখে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।প্রত্যেক মানুষেরই প্রতিদিন এই সাতটি জিনিস করা উচিত





সূর্যোদয়ের পূর্বে উঠা: শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে কেবলমাত্র যে সকল ব্যক্তিরা সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠেন, তারা জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেন। তাই যদি আপনি সূর্যোদয়ের আগে না করতে পারেন তবে এই অভ্যাসটি আগামীকাল থেকে ছেড়ে দিন। প্রতি সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা উচিত প্রতিটি ব্যক্তির। সূর্যোদয়ের আগে ওঠা অর্থাৎ সকালে যত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা যাবে, ততোই প্রকৃতির বিশুদ্ধ অক্সিজেন আপনার শরীরে যাবে, তার ফলে সারাদিন আপনি সচল এবং সতেজ থাকতে পারবেন।





প্রতিদিন যথাসময়ে স্নান করা: প্রতিটি ব্যক্তির প্রত্যেকদিন সঠিক নিয়মে স্নান করা উচিত। স্নানটি যদি সূর্যোদয়ের আগে করা যায় তাহলে খুবই ভালো। সূর্যোদয়ের আগে স্নান করা সেরা হিসেবে বিবেচিত করা হয়,তাই যদি আপনি প্রতিদিন সকালে স্নান না করে দেরি করেন তাহলে এটি আজকেই বন্ধ করুন। সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করা অভ্যাস করুন।সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করলে আপনি আপনার বাসি জামা ছেড়ে ঈশ্বরের কাছে পুজো দিতে পারবেন, আপনার এবং আপনার বাড়ির তাতে মঙ্গল হবে।





প্রতিদিনের উপাসনা: শাস্ত্রে পুজোর একটি বিশেষ গুরুত্ব বর্ণিত রয়েছে, এবং বলা রয়েছে যে একজন মানুষকে অবশ্যই প্রত্যেকটা দিন পুজো করতে হবে।যদি একটি মানুষ দিনে দুবার ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করে তবে ঈশ্বর খুশি হয়ে তার জীবন থেকে সমস্ত দুঃখ দূর করে দেন এবং মানুষের আত্মা শুদ্ধ অনুভব করে। প্রতিদিন ঈশ্বরের উপাসনা করা ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।তাই আপনি যদি প্রত্যেকদিন ঈশ্বরের উপাসনা না করেন তাহলে আজ এই বৃষ্টির পরিবর্তন করুন এবং প্রত্যেক দিন আপনার ইষ্ট দেবতার নাম নেওয়া শুরু করুন।ধুপ মোমবাতি জ্বালিয়ে যদি কিছুক্ষণ ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ানো যায় তাহলে ব্যক্তির এবং তার সমস্ত পরিবারের জন্য তা মঙ্গলদায়ক হয়।





সময়মতো খাদ্যাভাস: আমাদের দেহের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করা। খাদ্য ছাড়া আমাদের দেহ বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। তিনি অবশ্যই তিনবার এবং সঠিক সময় খাওয়া উচিত। প্রতিদিন সকাল নটা অব্দি সকালের খাবার শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করা হয়। এরপর আর সকালের খাবার গ্রহণ না করা উচিত। দুপুরের খাবার ঠিক বারোটার সময় গ্রহণ করা উচিত এবং রাতের খাবার টি সাতটায় খেয়ে নেওয়া উচিত। এতে ব্যক্তির পাচন ক্রিয়া সুস্থ থাকে। ব্যক্তির রোগ কম হয়। যদি আপনি এই অভ্যাসে অভ্যস্ত না হন তাহলে আজই আপনার অভ্যাস বদলান।সঠিক সময়ে খাদ্যাভাস একজন মানুষকে সুস্থ,সবল, সতেজ রাখতে সাহায্য করে।





অতিথি সেবা: শাস্ত্রে বলাই আছে “অতিথি হলো নারায়ন”। অতিথিকে ভগবান রূপে বিবেচিত করা হয় হিন্দু সমাজে। যদি আপনার বাড়িতে কোন অতিথি আসেন তাহলে আপনাকে শুদ্ধ মন নিয়ে তাকে সেবা করতে হবে। সেবা করা অর্থাৎ তার জলযোগের প্রতি আপনাকে নজর রাখতে হবে।একটি গৃহস্থের বাড়িতে অতিথি যদি মন ক্ষুন্ন করে চলে যায় তাহলে সেই গৃহস্থের অকল্যাণ হয়। অতি বড় শত্রু এলে ও হাসিমুখে তার সেবা-যত্ন করাই হলো একজন ব্যক্তির প্রকৃত ধর্ম।আপনি যদি কোন অতিথি কে অসম্মান করে থাকেন তাহলে আজই তাকে নিমন্ত্রিত করে সঠিক সেবা-যত্ন দিয়ে তাকে খুশি করুন।





দান করা: ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে যে একটি মানুষ দান করার মাধ্যম দিয়ে তার যাবতীয় পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সঠিক সময় অনুযায়ী দুঃখী এবং গরীব মানুষকে দান করতে হবে। দরিদ্র লোকদের দান করা এবং তাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া এক বিশাল পুন্যের কাজ। আপনি যদি এই কাজটি করতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনার জীবন সুখকর হয়ে উঠবে। যদি জীবনে আপনি কোনদিন কাউকে দান না করে থাকেন, দেরি না করে অবিলম্বে এই কাজটি শুরু করুন। প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে দান করা একজন ব্যক্তির পক্ষে লাভ দায়ক।





প্রবীনদের শ্রদ্ধা: ঈশ্বরের পরে যদি কোন ব্যক্তির কাছে মাথা নত করা যায় তাহলে আপনার গুরুজন। গুরুজন বলতে শুধু বাবা মা না, আপনার আশেপাশে এবং আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া প্রত্যেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষই আপনার গুরুজন।এই গুরুজনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধা রাখা উচিত এবং তাদের সঙ্গে একটি মধুর কন্ঠে কথা বলা উচিত। যে ব্যক্তি রা বয়স্ক ব্যক্তিদের অসম্মান করে, ভবিষ্যতে তার ফলস্বরূপ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অতএব আপনার থেকে বয়স্ক লোকেদের সম্মান করুন এবং যতটা সম্ভব তাদের সেবা করুন। এতে ভবিষ্যতে আপনার জীবনে সুখ এবং শান্তি বজায় থাকবে।




