




আজকের এই লেখাটি যদি ভালো ভাবে পড়ে দেখা হয় তাহলে জীবনে কেউ কখনো আপনার ক্ষতি করতে পারবে না । আপনাকে ঠকাতে পারবে না । আমাদের জীবনে একটা না একটা লক্ষ্য রয়েছে বা থাকে । তা সে যে কোন কাজ, পড়াশোনা অথবা ব্যবসা যাই হোক না কেন, সেখানে আরও মনোযোগী হয়ে উঠে আরও সফল হতে পারা সম্ভব চাণক্যের এই নীতি গুলো বুঝে, অনুসরণ করতে পারলে । এক কথায়, লেখাটি আপনার জন্য অনেক অনেক উপকারী হতে চলেছে । তাই অনুরোধ, হাতে সময় নিয়ে কোথাও বসে লেখাটি পড়ুন ।





চাণক্য কে ভারতীয় ইতিহাসের সব থেকে বড় ডিপ্লোম্যাট অর্থাৎ কূটনীতিক হিসেবে এখনো মনে করা হয় । তিনি অনেক বড় পন্ডিত, কূটনীতিক, দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন । চাণক্যের শিক্ষার বর্ণনা চাণক্য অর্থশাস্ত্র-এ আছে । আজও অনেক ইউনিভার্সিটি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থশাস্ত্র সিলেবাসে পড়ানো হয় মহান পণ্ডিত চাণক্যের নীতি । মৌর্য রাজবংশের উৎপত্তি এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য-র রাজা হওয়ার পেছনে সব থেকে বড় অবদান ছিল চাণক্যের ।





তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ছিলেন এবং একটি বই লিখেছিলেন । যার নাম “চাণক্য নীতি” । এই “চাণক্য নীতি” –তে ১৭ টি অধ্যায়ে রয়েছে এবং সেখানে অনেক কিছুর মধ্যে জীবনে চলার পথের উপযোগী বেশ কিছু নীতির কথা বলা হয়েছে । এই লেখায় উক্ত বইটি থেকে কিছু উপকারী নীতির কথা বলব যা বর্তমান সময়ের জন্য উপযোগী ।





১) আচার্য চাণক্য বলেছেন- একজন মানুষকে কখনো খুব বেশি সৎ হওয়া উচিত না । আচার্য চানক্য এই নীতিতে বোঝাতে চেয়েছেন, একজন ব্যক্তি যদি খুব সহজ এবং সৎ হয়, তাহলে তাঁর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো মুখোশধারী লোকেরা সবার প্রথমে তার ক্ষতি করবে । সৎ ব্যক্তি সবার সাথে বিনা স্বার্থে মেশে এবং বিনা দ্বিধায় তাদের সাহায্য করে ও তাদের আপন করে নেয় ।





অসৎ লোকেরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে । প্রয়োজন হলে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষতি করে । আচার্য চাণক্য এটা বলছেন না যে, আমাদেরকে অসৎ হতে হবে । তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যারা মিথ্যা ছলনা করে, যারা ধান্দাবাজ, সেরকম লোকেদের সাথে কখনো সৎ ভাবে মেলামেশা করা উচিত না । তাদের সাথে গোপনে ব্যবসা বা কোন প্রকার লেনদেন, এমন কি প্রেম ভালোবাসা করা উচিত না । কারণ, তারা যেকোনো সময় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।





২) আচার্য চাণক্য বলেছেন আমাদের সমস্ত গোপনীয়তা কখনো কারো সাথে শেয়ার করা বা বলা উচিত না । সে যদি খুব কাছের মানুষও হয় তাহলেও না । কারণ, আমরা যদি সেই কথা শুধুমাত্র নিজের ভেতরের না রাখতে পারি, তাহলে সেই দ্বিতীয় জনের উপরে কি ভরসা রয়েছে ? কি গ্যারান্টি আছে যে, সে কথাটি শুধুমাত্র নিজের ভিতর রাখবে । নিজের গোপন কথা অন্যকে বলার ভুল ধ্বংসের কারণ হতে পারে ।





আমরা অনেকেই, আমাদের ভিতরে জমে থাকা গোপন কথা স্পেশাল বা বিশেষ কারো সাথে অথবা খুব কাছের কেউ এর সাথে বিশ্বাস করে প্রকাশ করে ফেলি । বলার সময় আমরা ভাবি, তারা হয়তো কথাগুলো কাউকে বলবে না । কিন্তু সবাইকে ভরসা করা উচিত না । কারণ, তারা আপনার গুপ্তকথা অন্যদের বলে দিতে পারে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে । যার ফলে আপনার সম্পর্কে অপরের কাছে নেগেটিভিটি প্রকাশ পাবে এবং আপনার সেই দুর্বলতা নিয়েই আপনাকে ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে । তাই, সব সময় নিজের সিক্রেটস নিজের মধ্যেই রাখা ভালো ।





৩) এছাড়াও আচার্য চাণক্য বলেছেন, কখনোই কারো সাথে নিজের কাজ অথবা যে কাজ করতে চলেছেন তা শেয়ার করবেন না । যা করতে যাচ্ছেন তা গোপন রাখুন যতক্ষণ না কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত । কারণ আপনি যে কাজটি করতে চলেছেন তাতে অপরে সেই কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে । আপনাকে ডিমোটিভেট করে আপনার কাজটি বন্ধ করার চেষ্টাও করতে পারে ।





প্রায় সব লোক অন্যদের কাজে বা সফলতায় জেলাস ফিল করে । মোটামুটি ভাবে তারা কখনোই চায় না, আপনি যে কাজটি করতে চলেছেন, তাতে আপনি সফল হন । তাই যা করতে যাচ্ছেন, তা শুরু করার আগে, ভালো করে ভেবে চিন্তে, ধাপে ধাপে এগোন ভাল । এছাড়া মনের কথা নিজের মধ্যে রাখো ভাল । যখন কাজটিতে সফল হবেন, তখন সবাই এমনিতেই আপনার কাজের ব্যাপারে জানতে পারবে । সুতরাং কাউকে আগে থেকে বলার প্রয়োজন নেই আপনি কি করতে চলেছেন ।





৪) আচার্য চাণক্য বলেছেন, প্রতিটি বন্ধুত্বের পিছনে কোন না কোন রকম self-interest বা স্বার্থ অবশ্যই থাকে । এরকম কোনো বন্ধুত্ব নেই, যেখানে self-interest বা স্বার্থ নেই । এটা বাস্তব এবং সত্যি । একটি কথা, বেশিরভাগ লোক নিজের স্বার্থের জন্য আপনার সাথে বন্ধুত্ব করবে । যখন আপনি কাউকে নতুন বন্ধু বানান, তখন ঠিক বোঝা যায় না, এই বন্ধুত্বের পেছনে ঠিক কি স্বার্থ রয়েছে ? কিন্তু যদি একটু ধ্যান দেওয়া যায়, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আপনার বন্ধু আপনার কাছে ঠিক কী চায় ?





একটু লক্ষ্য করলে ধীরে ধীরে তাদের উদ্দেশ্য আপনার সামনে আসবে । তবে এটা বলছি না যে, আমাদের কারো সাথে বন্ধুত্ব করা চলবে না । সমাজে বসবাস করা এবং থাকতে গেলে নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব করতে হবে । তবে করার আগে অপরের স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে হবে । কখনোই কাউকে খুব বেশি বিশ্বাস করা বা পুরোপুরি ভরসা করা উচিত নয় । আমরা অনেক সময় খুব বেশি ভরসা করে আমাদের সব মনের কথা অন্যকে বলে ফেলি এবং শেষে তারা সেই কথা ধরেই আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে । তাই বন্ধুত্ব করুন, তবে কাউকে খুব বেশি বিশ্বাস না করে ।





৫) আচার্য চাণক্য বলেছেন, যে আপনার সামনে মিষ্টি কথা বলে এবং পেছনে আপনার বদনাম করে, সেরকম লোকেদের থেকে দশ হাত দূরে থাকা উচিৎ । কারণ তারা হল একটি বোতলে থাকা বিষ । এই রকম লোকেরা আপনার সামনে মধুর হাড়ি রাখলেও পিছন থেকে ছুরির আঘাত হানতে পারে । তারা পেছেনে বদনাম করবে এবং সবার কাছে আপনার ইমেজ ডাউন করার চেষ্টা করবে । এছাড়া বিশ্বাসঘা’তকতা করার কথা না হয় বাদই গেল । তাই সেরকম বন্ধুর থেকে সবসময় দূরে থাকুন । তাদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখাই ভালো । কারন, তাহলে তারা আপনার সাথে কথা বলার সুযোগ পাবে না এবং আপনার বদনাম করতে পারবে না ।





৬) নীতি শাস্ত্রে আচার্য চাণক্য বলেছেন, যদি আমাদের সামনে একজন দুষ্ট ব্যক্তি এবং একটি সাপ থাকে, তাহলে আমাদের সেই সাপটির কাছে যেতে হবে । কারণ সেই সাপ শুধু তার নিজের আত্মরক্ষার জন্য দংশন করে । দুষ্ট ব্যক্তি, যে কোন সময় সুযোগ পেলে, আমাদের ক্ষতি করবে । তারা সেই সুযোগের আশাতেই বসে থাকে । একটা জিনিস, যা আমাদের মানুষদের, অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে, তা হল, আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা । আমাদের চিন্তা দুই ধরনের হয় – ভালো চিন্তা এবং খারাপ চিন্তা । যাদের মাথায় সবসময় খারাপ চিন্তা থাকে, তারা সব সময় তাদের আশে পাশের লোকদের কি ভাবে ক্ষতি করা যায়, সেটাই ভাবে এবং ক্ষতিও করে । তাই আপনি যদি একজন দুষ্ট ব্যক্তিকে নিজের সাথে রাখেন, তাহলে সেই ব্যক্তি আপনার ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজবে এবং আপনার ক্ষতি করবে




