




বিয়ে মানেই মনে পড়ে চারদিন ধরে অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ। গায়ে হলুদ থেকে আরম্ভ করে তত্ত্ব সাজানো, সারারাত ধরে বাসর জাগা, ফুলশয্যার খাট সাজানো এই সব মিলিয়ে এক বিরাট আয়োজন। অতি সাধারণ ঘরের মানুষ হলেও বিয়েতে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে আয়োজন করতে চান প্রত্যেক মানুষ। আর্থিক সামর্থ্য থাকলে তো কথাই নেই।বিয়ের জাঁকজমক থেকে আরম্ভ করে খাওয়া দাওয়া হয়ে থাকে প্রতিযোগিতা। গেট সাজানো মন্ডপ সাজানো সবকিছুতেই আসে এখন নতুনত্ব।





চিরাচরিত বিয়ের এই নিয়ম ভেঙে কিছু কিছু মানুষ অন্যরকম বিয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। চারদিন ধরে আত্মীয়-স্বজন নেমন্তন্ন না করে একদিন সবাইকে কাজ সারছেন পরিবারের লোকজন।বাস্তব বুদ্ধি সম্মত মানুষেরা বিয়ে নিয়ে জাকজমক না করে সেই টাকা মেয়েজামাই অথবা ছেলে-বৌমার নামে ফিক্স করে দিচ্ছেন। ন্যূনতম কিছু নিয়ম ছাড়া অন্য কিছু আতিশয্য দেখাতে চান না অনেকেই।





কিছুদিন আগে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যাতে দেখা যায় তার বাড়িতে কিছু শিশু নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল। তারা প্রত্যেকেই অনাথ আশ্রমের শিশু। কনের বাড়ির পাশেই ছিল সেই অনাথ আশ্রম। অনাথ আশ্রমের ভাই দের নিয়ে বিয়েতে বসার ইচ্ছে ছিল সেই পাত্রীর। মেয়ের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি বাবা। তাই ১৬ জন ভাইদের নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে ছিল সেই কনে।





এমনই এক বিয়ের নজির গড়লো দেবীপ্রসাদ ও তিথি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন ৫০ জনের বেশি মানুষকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছেন। এমত অবস্থায় যাদের বিয়ের লগ্ন ছিল তারা নমো নমো করে বিয়ে সেরে নিয়েছেন। এই নবদম্পতি বিয়ের অনুষ্ঠানে লোকজন না খাইয়ে ৩০০ জন গরিব মানুষকে এক বেলা পেট পুরে খাওয়ালেন।





তারা মনে করেন এই সময় ৩০০জন আত্মীয়-স্বজনকে না খাইয়ে সেই অর্থ দিয়ে গরিব মানুষকে খাওয়ানো টা খুব দরকারি।সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী জমায়েত করা এখন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সেই অর্থ দিয়ে অতি সাধারণ কিছু মানুষকে এক বেলা খাইয়ে তাদের বিয়ে করে দিলেন অসাধারণ। এই দম্পতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার বাসিন্দা। পেশায় দুজনেই কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক।দেবি প্রসাদ এর কর্মস্থল ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ।





তিথি নেতাজি নগর কলেজের দিবা বিভাগের অধ্যাপিকা। তাদের প্রেম শুরু হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয়েছে বিয়েতে। চলতি বছরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।এইভাবে বিয়ে সিদ্ধান্ত কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবীপ্রসাদ বলেন, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দিনের পর দিন খেতে পায়না।





একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে লোকে শেষ করতে পারেনা। প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। এসব বাড়াবাড়ি করা ছাড়া কিছুই নয়।এই আয়োজন করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা দিয়ে যদি না খেতে পাওয়া মানুষের এক বেলা পেট ভরে সেটাই হলো আসল সার্থকতা। লাভ না থাকলেও অন্য সময় আমাদের বিয়ে হলেও আমরা একই কাজ করতাম”।





এই নবদম্পতিকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছেন এই গরীব মানুষেরা। প্রফেসর দম্পতির এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাবার পরই প্রশংসার বন্যা বয়ে গেছে সকলের মধ্যে। কতজন তাদের মতো সাহসী হয়ে উঠবেন তা বলা মুশকিল । কিন্তু আস্তে আস্তে এই দৃষ্টান্ত যেভাবে বাড়ছে তাতে বোঝা যায় মানুষের মধ্যে মানবিকতা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এই বিবাহ অন্য নবদম্পতিদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন সকলে।




